নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার দোহার উপজেলার নারিশা ইউনিয়নের মনিপাড়ায় (ঋষিপাড়া) ভালোবাসার টানে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে বিয়ে করার অপরাধে এক লাখ টাকা জরিমানার রায় না মানায় একটি পরিবারকে একঘরে করে রেখেছে সমাজপতিরা। রাষ্ট্রীয় আইনে এক ঘরে (সমাজচ্যুত) করার আইন বা বিধান না থাকলেও হিন্দু মনি সম্প্রদায়ের সমাজপতিদের রায়ে ওই পরিবারটির মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সুরেস মনি মাতব্বরদের নিদের্শে ওই পরিবারের সঙ্গে সবধরনের সামাজিক ও সম্পর্ক ছিন্ন করছেন গ্রামের লোকজন। এমনকি একঘরে করে রাখা ওই পরিবারের ৯ বছরের শিশুটিকেও খেলাধুলা করতে দেয়া হচ্ছে না । এবং সমাজচ্যুত করা পরিবারটির সদস্যদের সাথে গ্রামের সাধারণ মানুষের চলাফেরা, কথা বলা, জল-খাবার বিরত রাখাসহ মন্দিরে পুজা দেয়াসহ সকল প্রকার লেনদেন সম্পূর্ণ নিষেধ করেছে সমাজপতিরা। সমাজপতিদের নিদের্শনা কেউ অমান্য করলে তাদেরকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।
রামপ্রসাদ মনি’র সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে (৬ জুলাই) আমার মেয়ে রাধিকা মনি (১৭) সিরাজদিখান উপজেলার চরমোদন এলাকায় সঞ্জিত মনির ছেলে ‘অমিত মনি’র সাথে প্রেমের সম্পর্কে পিতা-মাতার অমতে পালিয়ে বিয়ে করে।
স্থানীয় হিন্দু মনি সম্প্রদায়ের সমাজপতিরা এ ঘটনাকে ন্যাক্কার-ধিক্কারজনক বলে অভিহিত করে। মনি সম্প্রদায়ের রেওয়াজ অনুযায়ী স্থানীয় হিন্দু সমাজপতি ‘সুরেস মনি’র নেতৃত্বে দশ সদস্য বিশিষ্ট গোবিন্দ মনি, রতন মনি, বাবু মনি, বড় জীবন মনি, ননি গোপাল, বলাই মনি, রামপদ মনি, স্বপন মনি, পরিমল মনি কে নিয়ে সালিশী গঠন করা হয়। গত অক্টোবর মাসে সালিশীদের ডাকা গ্রাম্য বিচারে ‘পালিয়ে বিয়ে করার অপরাধে’ মেয়ে রাধিকা মনির পিতা রামপ্রসাদ মনিকে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
লাকড়ি বিক্রেড়া রামপ্রসাদ মনি ‘দিন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থা। বিচারের এ রায় মেনে না নিলে সমাজ থেকে একঘরে ‘সমাজচ্যুত’ করা হয়। রায়ে পরিবারটির সদস্যদের সাথে গ্রামের সকল মানুষের চলাফেরা, কথা বলা, সম্পর্ক রাখা, মন্দিরে পুজা দেয়াসহ সকল প্রকাল লেনদেন সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয় সমাজপতিদের পক্ষ থেকে। সেই সাথে ওই পরিবারকে সামাজিক, ধর্মীয়সহ সব ধরনের কার্য থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা, এমনকি মন্দিরে পুজা দেয়া থেকে বিরত রাখার রায় দেয়া হয়।
রামপ্রসাদ বলেন, অন্যায় করলে আমার মেয়ে করেছে। আমার পরিবার কি অন্যায় করেছে। তাছাড়া আমার মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করলেও সে বর্তমানে সংসার করছে। আমি এ থেকে মুক্তি চাই। আপনাদের সহযোগিতা চাই।
এবিষয়ে সমাজপতি সুরেস মনি বলেন- মনি সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে কেউ যদি তাদের আত্বীয়দের মধ্যে একা একা বিয়ে করে তাদের শাস্তি স্বরূপ বিভিন্ন অঙ্কে টাকা জরিমানা করা হয়। এই টাকা না দিতে পারলে তাদের একঘরে করে রাখা হয়।
এ বিষয়ে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আলী বলেন, আমি তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়েছি। মনি সম্প্রদায়ের রেওয়াজ সেই লালসালুর অপসংস্কৃতিকেও হার মানিয়েছে। পরিবারটিকে সামাজিক বাঁধা থেকে মুক্ত করা হবে। পরিবারটি চাইলে আইনি সহায়তা দেয়া হবে।
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাসফিক সিগবাত উল্লাহ বলেন, আপনার মাধ্যমে (সাংবাদিক) মাধ্যমে জেনেছি। সরেজমিনে গিয়ে ভিকটিম ও সালিশীদের সাথে কথা শুনে এর সমাধান করা হবে। সমাধানের জন্য নারিশা ইউনিয়নের প্রশাসককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
